দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত জেলা ঝিনাইদহ। এ জেলায় ৬টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন গঠিত। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ঝিনাইদহের ৪টি আসনে ততই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা গেছে। সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থীদের সাথে প্রতিটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে বলে মাঠজরিপ থেকে জানা গেছে।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ৩৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ৮ জনের মনোনয়নপত্র বিভিন্ন কারণে বাতিল বলে গণ্য হয়। সেক্ষেত্রে ২৬ জনের প্রার্থিতা সঠিক বলে বিবেচিত হয়।
ঝিনাইদহ-১ আসনটি গঠিত শৈলকূপা উপজেলা নিয়ে। এখানে রয়েছে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী, ৪ বারের নির্বাচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই (এমপি)। তার বিরুদ্ধে ট্রাক মার্কা নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল। তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবন রয়েছে। দুই প্রার্থীই রাত-দিন এক করে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। পোস্টার ছেড়া, প্রচার মাইক ভাংচুরসহ কয়েকস্থানে মারমারির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে গেছে। সেই সাথে বিভিন্ন পথসভা থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেশমূলক বক্তব্যও ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি যেভাবে এগুচ্ছে তাতে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ও উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মামলা হয়েছে। যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
শৈলকুপার মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৭ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ জন।
ঝিনাইদহ-২ আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন। ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে ২ জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। গত দুইবারের সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র দাড়িয়েছেন প্রথমবারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তবে ২ জনের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানান এলাকার ভোটাররা। এরই মধ্যে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে এ আসনে। হরিণাকুন্ডুতে একই স্থানে ২ প্রার্থীর সমাবেশ ডাকায় উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় নৌকা প্রার্থীকে শোকজ করেছে জেলা নির্বাচন তদন্ত কমিটি। তাছাড়াও সদরের বাসুদেবপুর ও হাটগোপলপুরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারির ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়ির (শহরের গার্লস স্কুল) সামনে পোস্টার টাঙ্গায়, পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে প্রশাসন। সব মিলিয়ে দুই প্রার্থীই ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডু শহরে দিন-রাত নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করে চলেছে।
এরই মধ্যে গতকাল রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ১৫টি পথসভায় অংশ নিয়ে ঈগল প্রতীকের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তিনি সবাইকে একটি বার্তাই দিয়েছেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হবে। সুতরাং কেউ ভায় পাবেন না। ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডুর উন্নয়নের ধারা যদি এগিয়ে নিতে হয়, তরুণদের বেকারত্ব যদি দূর করতে হয়, রাস্তাঘাটের যদি উন্নয়ন চান তবে অবশ্যই ঈগল মার্কায় ভোট দিন।
ঝিনাইদহ-২ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৩ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ৩৮ হাজার ৭৬২ জন, হিজড়া ৫ জন।
দুই উপজেলা মহেশপুর-কোটচাদপুর নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-৩ আসনটি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তি উপজেলা মহেশপুর। এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন । দুই বারের সাংসদ শফিকুল আযম খান চঞ্চল। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তার সাথে বিগত দিনের সাংসদ নবী নেওয়াজকেও দল মনোনয়ন দেয়নি। তারা দুইজনই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলের হাইকমান্ড প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহ উদ্দীন মিয়াজীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে মিয়াজী ও চঞ্চলের মধ্যে।
ঝিনাইদহ-৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩ হাজার ২২৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৯৪৪ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৭ জন ও হিজড়া ৩ জন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়েই ঝিনাইদহ ৪ আসনটি গঠিত। এখানে হেভিওয়েট প্রার্থী ১ জনই তিনি ২ বারের নৌকার কান্ডারী সাংসদ আনারুল আজীম আনার। তিনি এবারও দলের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয় দিয়ে তৃতীয়বারের মতো নৌকার মনোনয়ন নিয়ে এসেছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের সাথে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানান ভোটাররা।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৩২৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৫ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ৫৫ হাজার ৮৬০ জন ও হিজড়া ৪ জন ।
ঝিনাইদহের ৪টি আসনে এবার ভোটকেন্দ্র থাকছে ৫৮৫টি।