অভাবের মুখে ৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ
মিয়ানমার একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে তার ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে। আর সেই দীর্ঘ মেয়াদী শাসনে হাপিয়ে উঠেছে জনতা। ২০২১ সালের ফেরুয়ারী মাসে অভুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকেই চলতে থাকে জান্তা সরকারের রাজত্ব। প্রায় তিন বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও এবার বদলে যাচ্ছে তাদের মানচিত্র। পতনের মুখে পড়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য। সামরিক অভুত্থানের পর থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। গড়ে তুলেছে জনশক্তি। তৈরি করেছে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। যারা একে একে দখলে নিচ্ছে জান্তার শহর।
মিয়ানমারের জনশক্তি এখন জান্তার গণশত্রু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত, সামরিক স্থাপনা সহ প্রধান সীমান্ত ক্রসিং, বেশ কয়েকটি শহর এবং ট্রানজিট রুট দখল করেছে। পাশাপাশি সরকারী সেনাদের ব্যাপকভাবে বিচ্যুত হতে বাধ্য করেছে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে ভুগছে জান্তা সরাকার।
সামরিক অভুত্থান মিয়ানমারকে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। জান্তা ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে প্রতিদিন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। অক্টোবরের মাসে অপারেশন ১০২৭ (মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি সামরিক জোট) শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত চারটি বড় ঘাঁটি এবং বেশ কয়েকটি বড় শহর বিদ্রোহীরা দখল করেছে। বপুল পরিমাণ ছোট অস্ত্র ও গোলাবারুদও জব্দ করা হয়েছে। মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে গুরাত্বপূর্ণ স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংঘাত মিয়ানমারের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে বাগো অঞ্চলের কিয়াউক্কি ও মোনে শহর; চিন রাজ্যের ফালাম, হাখা, কানপেটলেট, মাটুপি, মিন্দাত ও পালেতওয়া শহর; কায়াহ রাজ্যের বাওলাকে, ডেমোসো, এইচপাসাওং, এইচপ্রুসো, লোইকাও, মেসে ও ছায়া শহর; কায়িন রাজ্যের কাওকারেক ও মায়াওয়াদ্দি টাউনশিপ; ম্যাগওয়ে অঞ্চলের ম্যাগওয়ে, মায়াং, পাকোক্কু, পাউক, তাউংডউইংই ও ইয়েসাগিও শহর; সোম রাজ্যের কাইক্টো, থাটন ও ইয়ে টাউনশিপ, রাখাইন রাজ্যের বুথিডাং, কিয়াউকতাও, মংডু, মিনবিয়া, পাউকতাও, পোন্নাগিউন ও রাথেডাং শহর সহ সাগাইং অঞ্চল, শান রাজ্য, তানিনথারি অঞ্চল এবং কাচিন রাজ্যের বেশ কিছু শহর রয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ের মতো প্রধান নগর কেন্দ্রগুলোতেও তাতমাদোর (মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী) বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। লড়াইয়ে দেশব্যাপী ইউটিলিটি ব্যাঘাত ঘটছে এবং অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে। বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বিদ্যুৎ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে এটিএম, পেট্রোল স্টেশন এবং ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডেটার মতো অস্থায়ী পরিষেবাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের প্রতিটি শহর ও গ্রামের মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। ওষুধ এবং জ্বালানির ঘাটতিও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ১৩ নভেম্বর থেকে জান্তা অবরোধ আরোপের পর থেকে রাজ্যের ৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। সব কিছুর দাম বেড়ে হয়েছে খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী। একই সাথে কিছু এলাকায় নির্বিচারে গোলাগুলি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।