নারী সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক চুল। পাত্রভেদে একেকজনের চুলের রং, গঠন ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। পরিচর্যায়ও থাকে নারীদের বাড়তি নজর। এবার সৌন্দর্যবর্ধক এ চুলই জীবিকার নতুন দ্বার খুলে দিল উত্তর কোরিয়ায়। আয় বাড়াতে রীতিমতো চুল বড় করছেন দেশটির নারীরা। সেই চুল কেটে বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থও উপার্জন করছেন তারা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আশাতেই তাড়াতাড়ি সম্ভব চুল বড় করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন দেশটির অসংখ্য নারী। সম্প্রতি অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কিছু কিছু পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎসই এখন এই চুল।
নারীদের চুল থেকে বিভিন্ন আকার ও ধরনের পরচুলা তৈরি করা হয়। নকল চুল বা পরচুলার ‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি’তে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এ চাহিদা আরও বেড়েই চলছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া থেকে চীনে পরচুলা রপ্তানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন কাস্টমস সেপ্টেম্বর মাসে একটি বাণিজ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নথির উদ্ধৃতি দিয়ে ২৪ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়া সেপ্টেম্বরে চীনে ১৮২ টন পরচুলা, নকল দাড়ি এবং নকল চোখের দোররা রপ্তানি করেছে। যার মোট মূল্য ১৭.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এমনকি স¤‹্রতি এ শিল্প রপ্তানি বাণিজ্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছে উত্তর কোরিয়া। বিপরীতভাবে, সেপ্টেম্বরে চীন থেকে উত্তর কোরিয়ার বৃহত্তম আমদানি ছিল চুল। মোট ২১.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ২০৬ টন চুল আমদানি করা হয় দেশটিতে। এপি।
ব্যাপক চাহিদা থাকায় উত্তর কোরিয়ার নারীরা চুল যত লম্বা করা যায় সেদিকে মনোযোগী হচ্ছেন। যাতে করে তারা চড়া দামে চুল বিক্রি করতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর পিয়ংগান প্রদেশের একটি সূত্রে জানায়, ‘আমাদের দেশ স্মপ্রতি চীনের কাছে প্রচুর পরচুলা তৈরি এবং বিক্রি করছে। ফলে আমাদের পরচুলা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’ সঙ্গত কারণেই দেশটিতে লম্বা চুলের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
তবে চুল বড় করার এ কাজটি মোটেও সহজ নয়। এমনকি লম্বা চুল উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়ায় অনেক নারীই সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই একই সূত্র থেকে আরও জানা যায়, ‘তবুও, এমন কিছু নারী আছেন যারা সমালোচনা বিধিনিষেধ এড়িয়ে যান এবং গোপনে তাদের চুল বড় করেন যাতে তারা যতটা সম্ভব অর্থের বিনিময়ে এটি বিক্রি করতে পারেন। বিধিনিষেধ যখন জোরদার করা হয়, এই লম্বা চুলের নারীরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন।’ সূত্রটি আরও বলতে থাকেন, ‘নারীরা তাদের চুল ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা করেন। তবে নারীদের চুল গজাতে অনেক সময় লাগে। দ্রুত চুল বাড়ানোর চেষ্টায় তারা ঘন ঘন চুল ধৌত করেন। যদিও পরচুলা উৎপাদন শিল্প বুনন বা সেলাই শিল্পের মতো উন্নত বা সক্রিয় নয়, তবে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক পরিবার এখন পরচুলার সাহায্যে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের জীবন সহজ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও পরচুলা শিল্প স¤‹র্কে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে এবং কীভাবে নিজেরাই এটি তৈরি করতে হয় তা শিখতে চেষ্টা করছে।’
এমনকি অনেকেই নিজেদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পরচুলা তৈরী করছেন। সিনুইজুতে অসংখ্য বাসিন্দা রাতজেগে পরচুলা তৈরী করেন। চালের বিনিময়েও পরচুলা বিক্রি করছেন অনেকেই। আকার এবং ওজনের উপর নির্ভর করে পাঁচ, আট বা ১২ কেজি চালের বিনিময়েও বিক্রি হচ্ছে পরচুলা। একই সূত্র জানা যায়, “একটি ভালো দিনে, যদি সারাদিনই কেউ বাজারে ( সাধারন ব্যাবসা) কাটিয়ে দেয়, তাহলে ৩,০০০ ওন পর্যন্ত (কেপিডব্লিউ) উপার্জন করতে পারে পরচুলা ব্যাবসায়ীরা। এভাব সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার ওন ঘরে আসে। চার কেজি চাল কেনার জন্য এ অর্থ যথেষ্ট। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে যদি কেউ দুটি উইগ তৈরি করতে পারে, তাহলে অন্তত ১০ কেজি চাল কেনার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ বাজারে যাওয়ার পরিবর্তে এখন পরচুলা তৈরিতে তাদের রাত কাটাতে পছন্দ করছে।”