বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়ার তিনটি দফা—২, ৩ ও ৪—নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকদের নজরে খসড়ায় কিছু অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বিশ্লেষণের জন্য তিন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা খসড়া পর্যালোচনা করে ঐকমত্য কমিশনে দলীয় মতামত জানাবেন।
গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির সংশয় নেই। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কিছু শক্তি নির্বাচনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দল সব ধরনের সহযোগিতায় আগ্রহী। এ পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই সনদেও স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব, কী বলছে ইসরায়েলহামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব, কী বলছে ইসরায়েল
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকটি সভাপতিত্ব করেন। রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলে।
উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ভার্চুয়ালি), মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (ভার্চুয়ালি), সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২৮ পৃষ্ঠার খসড়া বিচার-বিশ্লেষণের জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদসহ তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন। খসড়ার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর রাখা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচনা হয়নি। এছাড়া খসড়ার কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। প্রথমে বলা হয়েছিল, আগামী সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন হবে, কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় তা উল্লেখ নেই।
সূত্রে বলা হয়েছে, জুলাই সনদের পুরো খসড়া নিয়ে বিএনপির সামগ্রিক আপত্তি খুব বেশি নেই। তবে ৮৪ দফার মধ্যে যেগুলোতে সব রাজনৈতিক দল একমত, সেগুলো বাস্তবায়ন কিভাবে হবে; নোট অব ডিসেন্ট যেসব বিষয়ে এসেছে, তার সমাধান কিভাবে হবে; সংবিধান সংস্কারের কথাগুলো কিভাবে প্রয়োগ হবে—এসবের নিষ্পত্তি জরুরি।নারী আসনের বিষয়ে বিএনপি প্রস্তাব করেছিল, ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশ আসনে নারী সরাসরি ভোটে অংশ নেবেন। কিন্তু অন্যান্য দল এ প্রস্তাবে দ্বিমত করেছে। এছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০-এর সংস্কারের ক্ষেত্রে বিএনপি চারটি ক্ষেত্র যুক্ত করতে চেয়েছে, যেখানে মতবিরোধ রয়েছে।
বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে চায় না। প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দলীয় প্রধানের পদ আলাদা, পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব—এসব অন্তর্ভুক্ত।বিএনপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় রাজি। তবে তারা চাইছেন না এমন ভারসাম্য যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না। দল মনে করে, সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যকর রাখতে প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।
জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় কোন প্রস্তাবে কোন দল একমত বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা সব উল্লেখ আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, সনদ সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেলে ভবিষ্যতে খারাপ নজির তৈরি হবে। তারা বলেন, ‘কোনো ডকুমেন্ট সংবিধানের ওপর হতে পারে না। সংবিধানের আইনি বৈধতা ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সমঝোতা দলিল বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, সনদের বিধি ব্যাখ্যা এবং মীমাংসার এখতিয়ার আপিল বিভাগের ওপর থাকবে। কিন্তু কীভাবে এবং কোন ভিত্তিতে এ এখতিয়ার প্রয়োগ হবে, তা আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জুলাই সনদ আইন নয় এবং রায়ও নয়।এদিকে, বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৪টার মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে খসড়ার বিষয়ে দলীয় মতামত জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তবে বিএনপি একদিনের বেশি সময় নিতে চাইলে বৃহস্পতিবার মতামত দাখিল করার কথা রয়েছে।