অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ইস্যুতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আগেই আলোচনা করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান। এবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি ও সেনাপ্রধানকে ঘিরে এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন তার ইউটিউব চ্যানেলে। গতকাল ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছে রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। মূলত এই মিটিং এর স্টেটমেন্টকে কেন্দ্র করেই এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক তার ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন।
ডা. জাহেদ উর রহমান এর মতে এটা একটি অর্থহীন বৈঠক এবং এখানে বিএনপিকে হিউমিলিয়েট করা হয়েছে। তার মতে এখানে একটি ম্যাসেজ পরিকল্পিতভাবে আমাদের (জনগণ) দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ডা. জাহেদ এর ভাষ্যে, ‘আমার কাছে মনে হয় পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের মেসেজ আমাদেরকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মেসেজ সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে সেনাপ্রধান এবং বিএনপিকে ধমক বা হুমকি দেয়া হয়েছে।’
এসময় ডা. জাহেদ উর রহমান গতকালের সেই মিটিং এর স্টেটমেন্টের অংশ ‘যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যথ্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা সংস্কার উদ্যোগ বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠ নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’ এটি তুলে ধরে ডা. জাহেদ দাবী করেন, ‘এখানে প্রথম কথাটা হচ্ছে সেনা প্রধানকে একটা অফিশিয়াল ফরমাল বক্তব্যে তুলে আনা হলো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য। সেনাপ্রধান সাম্প্রতিক সময়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন শুধু এটা না এর আগেও তিনি রাওয়া ক্লাবে একটা বক্তৃতা করেছেন সেটা নিয়েও সরকারের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি হয়েছিল।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘সেনাপ্রধান তার এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন কিনা তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল কিনা বক্তব্য এগুলো নিয়ে সরকারের অবস্থান থাকতে পারে। সরকার তাকে ডেকে প্রধান উপদেষ্টা এটা নিয়ে তাকে সতর্ক করতে পারেন। এটা নিয়ে তাকে তিরস্কার করতে পারেন। কিন্তু অফিশিয়াল স্টেটমেন্টে এটা আনা হয়েছে। তার মানে সরকার সেনাপ্রধানকে হুমকি বা ধমক দিচ্ছেন এটা জনগণের সামনে অফিশিয়ালি সরকার দেখাচ্ছেন।’ ডা. জাহেদ এর মতে, সেনা প্রধানকে এভাবে ধমকানোর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে বুঝাচ্ছেন যে তাদের হ্যাডম আছে।
ডা. জাহেদ উর রহমান তার আলোচনার এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন, এতদিন রাস্তা বন্ধ করে যমুনার সামনে গিয়ে অনেক অনেক আন্দোলন হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের টনক নড়েনি। কিন্তু যখনি ইশরাক হোসেন তাকে মেয়র করার দাবিতে আন্দোলনে নামলেন তখনি সমস্যা হলো। এরপর তিনি বলেন, ‘শত শত এই ধরনের রাস্তা ব্লক করার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা করেছি যে সরকারকে কঠোর হতে হবে আইন প্রয়োগ করতে হবে বল প্রয়োগ করতে হবে। আমি বলেছি অনেক সমালোচিত হয়েছি কিন্তু বলেছি বহুবার। সরকার যদি নৈতিকভাবে এবং আইনের মধ্যে থেকে প্রপোরশনেটলি বল প্রয়োগ করে সেটা জনগণ খারাপভাবে দেখবে না কিন্তু সরকার এগুলো করে নাই বিশেষ করে একটা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সরকার কোনদিনও বল প্রয়োগের পথে হাটে নাই সেটা হচ্ছে ইসলামিস্ট এক্সট্রিমিস্টরা বহু বহু ক্ষেত্রে তারা বহু কিছু ঘটিয়েছে সরকার পদক্ষেপ নেয় নাই।’
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং এনসিপির বিষয়েও কখনো কোন কথা হয়নি এইসব আন্দোলন নিয়ে কিন্তু ইশরাক হোসেন আর বিএনপির বেলায় হচ্ছে মানে, এটা মতলববাজি। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার কেউ নির্বচন চাইলেই তাদেরকে ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করছে।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সরকারের স্বকীয়তা সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন অস্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব কওে তুললে সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এই যে জনগণ জনগণ বলা হয়। এই সরকারের জনগণ বলার কি আছে? সরকারের কোন কাজে কোন ক্ষেত্রে যদি সমস্যা তৈরি হয়, সরকার একটা এক্সিকিউটিভ, তার এক্সিকিউটিভ পাওয়ার আছে। আইন অনুযায়ী সে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। জনগণের আলাপটা কেন? এবং এই জনগণ কারা? ধারণা করি এটা বিএনপিকে ধমক বা হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমারও কিন্তু একটা রিজার্ভ ফোর্স আছে ওটা মাঠে নামাবো।’
তার মতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘয়িত করার পায়তারা করছে। তিনি বলেন, ‘কিছু জনগণ ডক্টর ইউনূসের পাঁচ বছর লাগবে টাকবেলা আওয়াজ ফেসবুকে তুলতে তুলতে এখন মাঠেও নামতে শুরু করেছে বোধ করি তারাও আস্তে আস্তে নামবেন নামাবেন গণভোট চাই ওনাকে পাঁচ বছর এসব আলাপ আমরা জানি আসতে যাচ্ছে। আমরা খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি ডক্টর ইউনুস দেশকে একটা সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’