দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিরাজমান বিভাজন মিটিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্যাসিস্ট বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধারা। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন পোস্টে তারা এই ঐক্যের আহ্বান জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ আজ রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শক্তির প্রতি আহ্বান— যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিলো, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মনে রাখবেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে দেশে-বিদেশে অনেকে নাখোশ হয়ে আছে। এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে।আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খন্ড বিখন্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশী-বিদেশী দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পায়তারা করবে।
দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মান করতে হবে। কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘৩৬ জুলাই’ বৃহৎ শক্তি ও স্পিরিটের নাম। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর শিশুসুলভ অপরিপক্ব আচরণের কারণে জুলাই হারিয়ে যেতে পারে না। শহীদ-গাজীদের প্রতি আমাদের দায় আছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে আমরা এক ও অভিন্ন।
সকলের মনে রাখা দরকার- প্রকৃতি তার নিজস্ব গতির আলোকেই চলে। যারাই বাড়াবাড়ি করবে, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে কখনো ভুল করে না।মহান আল্লাহ আমাদের সহায়। হাসবুনাল্লাহ।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়। দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। পুরাতন যেকোন বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দু:খিত। সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী শ্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্টীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, নিজ স্বার্থে আপনারাই জুলাইকে ধ্বংস করেছেন।বহুবার বলেছি ঐক্য বিনষ্ট করবেন না, উপরন্তু শুধু দেখেছি স্বেচ্ছাচারিতা আর অহংকার।বারবার অপ্রিয় কথাগুলো বলায় সবক্ষেত্রেই হয়েছি কোনঠাসা।প্রত্যেককেই হিসেব দিতে হবে, জুলাইয়ের হিসাব।
মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি বহুবার, জুলাইয়েও হয়েছি এখনও হচ্ছি। যে মিডিয়া শেখ হাসিনাকে দানব বানালো তার সংস্কার কতদূর মি. *মহোদয়!!! ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরিতে কয়টা নতুন মিডিয়া যাত্রা করলো গত নয় মাসে?? কিংবা পুরনো কয়টা মিডিয়া ফ্যাসিবাদবিরোধী বয়ান তৈরিতে কাজ করছে?? কয়টা মিডিয়া আওয়ামী আমলের দূনীতি,গুম-খুন, কিংবা সন্ত্রাস -চাঁদাবাজি নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট করছে??
কিন্তু ঠিকই আসিফ মাহমুদ, কিংবা মাহফুজ, হাসনাত কিংবা হান্নান সবাইকেই টার্গেট করা হয়েছে।আপনারা যেভাবেই উপস্থাপন করেন না ক্যান দেশের পূণঃ ক্রান্তিলগ্নে গুলির সামনে দাঁড়ানো প্রথম সারিতে খুঁজে নিয়েন।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কাইয়ুম বৃহস্পতিবার (২২ মে) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে লিখেছেন, ফ্যা’সি’বা’দবিরোধী সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান—সব ধরনের মান, অভিমান ও ক্ষোভ পাশ কাটিয়ে, জাতীয় স্বার্থে এখনই দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।জুলাইয়ের গাদ্দারদের বলতে চাই— ইতিহাস তোমাদের ক্ষমা করবেনা। জুলাইয়ের প্রধান শক্তিগুলোর বিভাজন সৃষ্টির দায় তোমাদেরই। জুলাই বিপ্লবের শক্তিগুলোর পিঠে ছুরি মেরে তোমরা মূলতঃ দেশকে ছুরিকাঘাতে আহত ও রক্তাক্ত করেছো।
এই মুহূর্তে বলব, সবাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। দ্বিধা নয়—এই লড়াই দেশ ও জনগণের জন্য। আল্লাহ যেন এই জাতিকে সাহায্য করেন এবং সকল ধরনের ক্ষতি ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেন। আমিন।