সম্প্রতি একটি গ্রুপ চ্যাটে যুক্তরাষ্ট্রের তথা ট্রাম্প প্রশাসনের স্পর্শকাতর ও গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব তথা পেন্টাগন প্রধান পিট হেগসেথ বলেছেন, ‘কেউ যুদ্ধ পরিকল্পনা পাঠাচ্ছিল না এবং এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই’।
সোমবার দ্য অ্যাটলান্টিকের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের পরই তার এই মন্তব্য এলো।
ওই প্রতিবেদনে গোল্ডবার্গ দাবি করেন, তিনি ভুলবশত একটি গোপনীয় মেসেজিং গ্রুপে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইয়েমেনের সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
গোল্ডবার্গের দাবি, তিনি একটি সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত হন, যে গ্রুপের সদস্য ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড।
দ্য অ্যাটলান্টিকের সম্পাদক দাবি করে বলেন, ‘এটি ছিল আসল চ্যাট এবং আমি নিশ্চিত হওয়ার পরই গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসি’।
তবে পেন্টাগন প্রধান হেগসেথ বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে গোল্ডবার্গকে ‘মিথ্যাবাদী ও প্রতারক সাংবাদিক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘ভুয়া খবর তৈরি করাই গোল্ডবার্গের পেশা’।
এদিকে গোল্ডবার্গ সিএনএনকে বলেছেন, ‘হেগসেথ মিথ্যা বলছেন। চ্যাটে স্পষ্টতই হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল’।
তিনি দাবি করেন, ‘কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হবে, কীভাবে হবে, কারা সেখানে থাকবে—এসবই আলোচনার বিষয় ছিল’। তবে তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেননি কারণ ‘এটি খুবই সংবেদনশীল বিষয় ছিল’।
গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন, তদন্তের দাবি ডেমোক্রেটদের
এদিকে ডেমোক্রেট নেতারা এই ঘটনাকে ‘মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
সিনেট মাইনরিটি লিডার চাক শুমার বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন বেসরকারি নাগরিক যদি ভুল করে এমন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চ্যাটে যুক্ত হতে পারে, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবস্থা কী?’
হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিস বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্যভাবে বেপরোয়া ও বিপজ্জনক একটি ঘটনা’। তিনি কংগ্রেসের তদন্ত দাবি করেন।
তবে হাউস স্পিকার মাইক জনসন জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
তার ভাষায়, ‘এটি একটি ভুল ছিল, যা প্রশাসন ইতোমধ্যেই স্বীকার করেছে। তারা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবে’।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। এটি প্রথমবার শুনছি। তবে আমি দ্য অ্যাটলান্টিকের ভক্ত নই’।
তবে যাই হোক না কেন, এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যা আগামী দিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও আলোচনার বিষয় হতে পারে। সূত্র: আনাদোলু