বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করবেন লন্ডন সফররত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও অন্তত পাঁচটি ইস্যুতে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন। ইস্যুগুলো হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করা, দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। পাশাপাশি দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জোটবদ্ধ দলগুলোকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কীভাবে ঐক্য ধরে রাখা যায়, সে বিষয়টিও বৈঠকে থাকবে। গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
বিশ্ব এইডস দিবস আজ, এবার আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চবিশ্ব এইডস দিবস আজ, এবার আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ
বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আন্দোলন-কর্মসূচির চাপ না থাকলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সেজন্য নানা কৌশলে এগোচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নতুন কৌশল নির্ধারণের একটি পন্থা বের হয়ে আসতে পারে তারেক-ফখরুলের একান্ত বৈঠকে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এ দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তারা রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুটিই সমান্তরালভাবে চালানোর পক্ষে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ায় সরকারের ওপর নরমে-গরমে ‘চাপ’ অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এজন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিতে বলছে তারা। ডিসেম্বরের মধ্যে সেটি না দিলে আগামী মার্চ মাস থেকে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। এই পরিস্থিতিতে দলের মহাসচিব লন্ডন সফর করছেন। ১০ দিন থাকার পর ১১ ডিসেম্বর তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। ডিসেম্বর শেষ হলে বিএনপির কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণার কী হবে, সে বিষয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতা বিস্তারিত আলোচনা সেরে একটি সিদ্ধান্তে আসবেন বলে সূত্রগুলোর অভিমত।
দুই নেতার বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশ পরিচালনায় আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছি। সরকার সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছে। এখন আমরা দেখব তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়। দলীয়ভাবে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। দুই নেতার বৈঠকের পর কী সিদ্ধান্ত আসে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
নির্বাচনের রোডম্যাপ আদায়ে কৌশল চূড়ান্ত হবে লন্ডনেনির্বাচনের রোডম্যাপ আদায়ে কৌশল চূড়ান্ত হবে লন্ডনে
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দলের শীর্ষ দুই নেতার বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তা ছাড়া দলের সাংগঠনিক বিষয়ের পাশাপাশি সার্বিক রাজনীতির বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে তো সব সময় আলোচনা হচ্ছে। এবার সামনাসামনি বসে আলোচনা করবেন। নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে ডিসেম্বরের পর দল কর্মসূচির কথা বলেছে। তাই এখনই সরকারের ওপর বড় ধরনের কোনো চাপ প্রয়োগের চিন্তাভাবনা বিএনপির নেই।’
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতির কারণে হয় জেলে, না হয় মামলার জালে ব্যস্ত রাখা হয়েছিল মির্জা ফখরুলকে। বেশ কয়েকবার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চেয়েও পারেননি তিনি। যে কারণে তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি তার দেখা হয়নি। এ দুই নেতার বৈঠক থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অন্তত তিনজন দেশ রূপান্তরকে জানান।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুল দুবার লন্ডন গিয়েছিলেন। তাকে এবার স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। তার সম্মানে কয়েকটি কর্মসূচি করারও কথা রয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে আমি লন্ডন যাচ্ছি। পাশাপাশি আপনারা জানেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে লন্ডনে ডাক্তার দেখাব। সেভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হয়েছে।’
বিএনপির মধ্যে আলোচনা রয়েছে, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও তার দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দরকার। তার অবর্তমানে দলের ভেতরে কোনো সংকট তৈরি হয় কি না, সে ভাবনাও রয়েছে। আবার তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে। কয়েকটি মামলার রায়ে তাকে সাজাও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ৫ আগস্টের পর এরই মধ্যে কয়েকটি মামলায় তারেক রহমান খালাসও পেয়েছেন। এখন তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন, সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
একনজরে আজকের দেশ রূপান্তর (১ ডিসেম্বর)একনজরে আজকের দেশ রূপান্তর (১ ডিসেম্বর)
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তার আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে আগামী বছরের শুরুতে তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল। সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে শুনিনি। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পরপরই দেশে ফেরার সম্ভাবনা বেশি।’
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সব দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করার পক্ষে বিএনপি। একই সঙ্গে নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল হওয়ার পন্থা নিয়েছে দলটি। বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে ৯০ দিনের মধ্যে তৃণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠনের জন্য চিঠি দিয়ে কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব কমিটিতে কাদের স্থান দেওয়া যায়, সে বিষয়টি দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মির্জা ফখরুলের সফরে সাংগঠনিক কমিটির বিষয়ে দুই নেতার খোলামেলা আলোচনার সুযোগ হয়েছে।
সব ছাপিয়ে দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রা ও তারেক রহমানের দেশের ফেরার ইস্যু নিয়ে খোদ দলের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপি মহাসচিব দেশে ফেরার পর চেয়ারপারসন চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। সেভাবেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসা প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, ১৩ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। পরে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। দেশে ফেরার পথে তিনি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করবেন। খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে তার স্বাস্থ্য ও দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে লন্ডন সফর পিছিয়ে যেতে পারে। আবার এক-এগারোর মতো শঙ্কা রয়েছে দলটির মধ্যে। সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে তার বিদেশযাত্রা স্থগিত হতে পারে।
আসামিদের দণ্ড বহাল থাকবে কি না জানা যাবে আজআসামিদের দণ্ড বহাল থাকবে কি না জানা যাবে আজ
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে। দলের মহাসচিব দেশে ফেরার পর ১৩ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে যুক্তরাজ্য নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে। দেশে ফেরার আগে সৌদি আরবে ওমরাহ করবেন তিনি। সব মিলিয়ে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।’