শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র কোথায়, তিনি কোনো লিখিত দেননি। তার মানে শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ড. আসিফ নজরুল এবং তার গংরা যে সরকার গঠন করেছে এটি একটি অবৈধ, অসাংবিধানিক ও দখলদার সরকার।
’
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে নানক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে জামায়াত, হিজবুত তাহরিরসহ জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। মাস্টারমাইন্ডের এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে মুছে ফেলা। যেটি প্রমাণিত হয়েছে গত আড়াই মাসে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর মিথ্যা, বানোয়াট হত্যা মামলার দায় চাপিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো কাউকে মারেনি, কখনো কাউকে নিপীড়ন করেনি। সমস্ত হত্যার দায় বর্তমান অসাংবিধানিক অবৈধ সরকারের এবং কথিত সমন্বয়কদের। এর বিচার একদিন হবেই ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও লক্ষ লক্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগুচ্ছে। প্রতিক্ষেত্রে এখন দখলদারিত্ব চলছে।
কিশোর গ্যাংদের একটি অংশকে নিয়ে এসে তাদের সমন্বয়ক করা হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠা নেতা বলেন, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার কোনো অধিকার এই অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। শিগগির এই সমস্যার অবসান ঘটবে।
দেশমাতৃকার যেকোনো প্রয়োজনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ সময়ের পরিক্রমায় সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা পেয়েছে। গত কয়েক দশকে এই সংগঠন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রশ্রয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, দখল, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সর্বগ্রাসী রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। স্কুল-কলেজ, সড়ক-মহাসড়কসহ প্রায় সব নির্মাণকাজ থেকেই চাঁদা উঠাত ছাত্রলীগ। চাকরি পাইয়ে দেওয়া, বদলি বাণিজ্যেও এই সংগঠনের কর্মীদের একাধিপত্য ছিল।
দেশজুড়ে ছোট বাজার থেকে শুরু করে শত বা হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজেও হস্তক্ষেপ ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের কর্মীরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ২০১৩ সাল থেকে। তৎকালীন সরকার ছাত্রলীগকে মাঠে নামায় জামায়াত-শিবিরকে দমন করার জন্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতায় সংগঠনটির অনেকেই প্রায় দানব হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নিষ্ঠুরতার প্রমাণ দেয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হকিস্টিক, রডসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেদিন তাঁদের হাত থেকে ছাত্রীরাও রেহাই পাননি। ওই ঘটনার পরের দিন থেকেই মূলত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের পদপদবি পেয়েই দখল, চাঁদাবাজি, ভাড়াটে গুণ্ডা হিসেবে কাজ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের আশকারায় তাঁদের অনেকে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ছাত্রলীগের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরও। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হলেও কিছু করার ছিল না দলের নেতাদের। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতটাই বেপরোয়া হয়েছিলেন যে তাঁরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করতেও ছাড়েননি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। আলটিমেটামের এক দিন আগেই গত বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। নিষিদ্ধ করার পর আলোচনায় আসছে তাদের নানা অপকর্ম।
ছাত্রলীগ ছিল আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা : সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে বেশি আশকারা দেওয়ার কারণে তারা কাউকে মানতে চাইত না। এমনকি হেলমেট ছাড়া রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল পুলিশের তরফ থেকে নিষিদ্ধ করলেও তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য। পুলিশ তাদের কিছু বলতে গেলে মারমুখী হয়ে উঠত।
তিনি আরো জানান, ছাত্রলীগের অনেক নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ থাকায় পুলিশের চাকরি হারানোর ভয় ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো কোনো ছাত্রলীগ নেতা বেয়াদবি করলেও তাঁরা বিষয়টি চেপে যেতেন। অনেকে পুলিশের কাছে প্রতিকারও চাইতেন, কিন্তু কিছুই করার ছিল না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগ) অতীত কার্যকলাপ ভালো ছিল না। ছাত্র হত্যা, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়েছিল। ছাত্রসংগঠনের যে আদর্শ তা থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার কারণেই তাদের নিষিদ্ধ হতে হলো।’
এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘একটি সংগঠন নিষিদ্ধ করার জন্য যত ধরনের উপাদান প্রয়োজন, গত ১৫ বছরের ছাত্রলীগের মধ্যে তার সবই বিদ্যমান ছিল। ফলে তাদের সরকার নিষিদ্ধ করতে পেরেছে। গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে তারা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। ছাত্রলীগকে দিয়ে বিরোধী রাজনীতিকদের হেনস্তা করা হতো। তারা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে মারধর করত, যা আইনের চোখে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটা লড়াকু ছাত্রসংগঠন (ছাত্রলীগ) ধীরে ধীরে তার চরিত্র বদলে একটা ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল সংগঠনের দিকে যাত্রা শুরু করল।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে অসংখ্য অপরাধে জড়িয়েও বেশির ভাগ ছাত্রলীগকর্মী নেতাদের প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যেতেন।
ধর্ষণের অভিযোগ : ২০১৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই ধর্ষণকাণ্ড অবশ্য নতুন নয়। চাঞ্চল্যকর ধর্ষণকাণ্ডের কারণে ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ আলোচনার শীর্ষে আসে। তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক শততম ধর্ষণ করে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নানা টালবাহানার পর জাবি প্রশাসন তাঁকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনার নায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। এ রকম ধর্ষণের ঘটনা অসংখ্য।
হত্যাকাণ্ডে ছিল সিদ্ধহস্ত : ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। ফেসবুকে ভারতবিরোধী একটি পোস্টের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের হাতে পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নিহত হন দরজি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস। তাঁকে শিবিরের কর্মী সন্দেহ করে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। ওই সময় অনেকে ভিডিও ধারণ করছিল। বিশ্বজিৎ বাঁচার জন্য কাকুতিমিনতি করে বলছিলেন তিনি শিবিরের কর্মী নন। কিন্তু তাতে থামেননি ছাত্রলীগের কর্মীরা। অবশেষে তাঁর মৃত্যুর পর জানা যায় যে তিনি শিবিরের কর্মী নন, দরজির কাজ করেন। ওই হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। পরে অবশ্য উচ্চ আদালত থেকে তাঁদের রেহাই দেওয়া হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম হত্যার ঘটনাও কম নয়।
ছাত্রলীগ করে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান : সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, প্লট, ফ্ল্যাট দখল ও চাঁদাবাজি করে ছাত্রলীগের অনেক নেতা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। তাঁদের একজন গাজীপুরের রেজাউল করিম। ছাত্রলীগের এই নেতা ৩২ বছর বয়সে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন সাভারের আতিকুর রহমান আতিক। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই হয়েছিলেন সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। সভাপতি হওয়ার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। শতকোটি টাকার মালিক বনে যান তিনিও। এ রকম ঘটনা অসংখ্য।
ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি : গত ৩ জুন রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-সংলগ্ন পলাশী কাঁচাবাজারে ‘চাঁদাবাজি’ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. মেহেদী হাসান ও শহিদুল ইসলাম গণপিটুনির শিকার হন। মেহেদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। শহিদুল তাঁর সহযোগী। চাঁদাবাজির মামলায় দুজনকে পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্যও ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হতো। গত ১৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান আটকে চাঁদাবাজি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চালক প্রতিবাদ করলে কাভার্ড ভ্যানটিই আটকে দেওয়া হয়। পরে রাত ২টার দিকে হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কাভার্ড ভ্যানটি ছেড়ে দেন হল ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মী। এ রকমভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, পাড়া-মহল্লায় ছোট-বড় সব স্তরের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীই বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিলেন।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি আর আধিপত্যের খবরে ঠাসা থাকত পত্রিকার পাতা। সড়ক-মহাসড়কসহ দেশজুড়ে যত ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো, এর প্রায় সব স্থানেই বেপরোয়া হস্তক্ষেপ ছিল ছাত্রলীগের। বলতে গেলে চাঁদা না দিয়ে নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ছাত্রলীগের হামলা : ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাংলামোটরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা সামিউল হক আহত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মশিউর রহমান রুবেল, মামুনুর রশীদসহ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিলেন। বিরোধী নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে হামলার এ রকম ঘটনাও অসংখ্য
দেশের ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতির অন্যতম প্রাচীন সংগঠন ছাত্রলীগ। দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবগাথা অধ্যায়ের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম অবিচ্ছেদ্য। তবে গত কয়েক দশকে ছাত্রলীগের পরিচিতি সন্ত্রাসী, দখলদার, চাঁদাবাজ আর লুটপাটকারী সংগঠন হিসেবে। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা একেকজন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।
শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন; জেলা পর্যায়ের নেতাদেরও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিস্তর অভিযোগ। দেশ-বিদেশেও সম্পদের পাহাড়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে চলে যান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ২০১৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১১ সালে ছাত্রলীগে তিনি যোগ দেন। জানা যায়, তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশের টাকায় লন্ডনে চারটি কম্পানি খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন নাজমুল। এসব প্রতিষ্ঠানে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িতসহ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। নাজমুলের নামে ব্রিটেনের কম্পানি হাউসে আবাসন, গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট ক্লেইম ম্যানেজমেন্ট, পণ্যের পাইকারি বিক্রেতা, বিজ্ঞাপন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি কম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি কম্পানির পরিচালক পদে তাঁর নাম নেই। বাকি চারটি কম্পানির মধ্যে একটির একক পরিচালক এবং আরো তিনটি কম্পানির যৌথ পরিচালক হিসেবে তিনি রয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ তুলেছিল খোদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদকের নানা অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরে করা ওই অভিযোগে তখন ১০০ কেন্দ্রীয় নেতার সই নেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আগস্টে জাতীয় শোক দিবসের মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণ, ছাত্রলীগের দুই কাণ্ডারির স্বেচ্ছাচারিতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন, পদ বাণিজ্য, প্রেস রিলিজের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া রাতের আঁধারে কমিটি গঠন অভিযোগে জায়গা পেয়েছে। এ ছাড়াও বিবাহিত, চাঁদাবাজ, মাদকসেবী, ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীদের কমিটিতে পদায়ন, সাধারণ সভা না করা এবং সংগঠনের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ ছিল।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র ঘিরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। তখন অবশ্য তাঁদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
আলোচিত ফরিদপুরের দুই হাজার কোটি : ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এটি স্বীকারও করেন। ওই বছরের ২৬ জুন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে প্রধান আসামি করে অবৈধ উপায়ে দুই হাজার কোটি টাকা আয় ও পাচারের অভিযোগে ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করে সিআইডি।
শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ নেতা বায়জিদ হাতিয়েছেন শত শত কোটি টাকা : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ নেতা বায়জিদ আহম্মেদ খান। শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ নেতা বনে গিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে তিনি বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের অন্যতম সহযোগী হয়ে নানা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এলাকায় এখন বায়জিদ খানের পরিচিতি ক্যাসিনো বায়জিদ হিসেবে।
স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর কোনো উপস্থিতি না থাকলেও তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়ার পর তাঁর পরিচিতি বাড়ে। এ সময় নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অস্ত্র ও কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হন।
ছাত্রলীগের পদ পেয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি আতিক : ঢাকা সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা ছিল তাঁর পরিবারের। ২০১৬ সালে সাভার ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে যেন আলাদিনের জাদুর প্রদীপ হাতে পান। কয়েক বছরের মধ্যে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি দখল, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, অবৈধভাবে একচেটিয়া ঠিকাদারি ব্যবসা, ফুটপাত থেকে শুরু করে শিল্পপতির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ডিশ ব্যবসা, মার্কেট দখলসহ নানা উপায়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। ঘুরতেন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারধর করতেন।
গাজীপুরে অপকর্মে কোটিপতি ডজনখানেক ছাত্রলীগ নেতা : গাজীপুরে হাসিনা সরকারের সময়ে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এক ডজনের বেশি ছাত্রলীগ নেতা। তাঁদের কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিক। গড়েছেন বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি। জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন কয়েকজন। তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে উপজেলা ইউনিয়ন ও কলেজ কমিটি বিক্রি, মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ঝুট ব্যবসা ও তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ।
এরশাদ : মাসুদ রানা এরশাদ গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০১৩ সালে সভাপতি হয়ে শুরু করেন ঝুট ব্যবসা, জমি দখল ও শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি। অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। হয়ে যান গাড়ি ও বাড়ির মালিকও।
মশিউর রহমান সরকার বাবু : টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার বাবু প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পরিবারের ঘনিষ্ঠ। ২০২২ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েই দুই বছরে শূন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি বিক্রি, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, ঝুট ব্যবসা, কিশোর গ্যাং লালন ও তদবির বাণিজ্যের অভিযোগও বিস্তর।
রেজাউল করিম : দরিদ্র পরিবারের সন্তান রেজাউল করিম টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ার পর জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। কয়েক বছরেই গড়েন একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট।
সোহেল রানা : টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পদ সোহেল রানা সাবেক এমপি জাহিদ আহসান রাসেলের পরিবারের কাছের লোক। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, ঝুট ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে।
উত্তম অপু : পুবাইলে জোরপূর্বক জমি দখল, টিপসই নিয়ে লিখে নেওয়া, বালুর ব্যবসা ও মাদক ব্যবসা করে দুই বছরেই কোটিপতি বনে যান পুবাইল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় কারখানা ও বাড়িঘর নির্মাণে চাঁদা দিতে হতো বলে জানায় স্থানীয়রা।
দেলোয়ার হোসেন : ছাত্রলীগের সভাপতি দেলোয়ার পদ পেয়েই শুরু করেন ঠিকাদারি, জমির ব্যবসা, বদলি ও তদবির বাণিজ্য। অল্প দিনে মালিক হন কোটি কোটি টাকার।
খাত্তাব মোল্লা : ২০১৫ সালে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর আর্থিক উত্থান ঘটে খাত্তাব মোল্লার। হয়ে ওঠেন ত্রাস। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি ঝুট ব্যবসা করতেন। ঝুট ব্যবসা করে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি।
সাদ্দাম হোসেন : কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বিশ্বস্ত সহচর। ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, বালু ভরাট, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রিসহ নানা কাজে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা অর্জন করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান সিরাজুল ইসলাম। পদ পাওয়ার পর যেন তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। দুই বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যান তিনি, হাঁকান দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। কিনেছেন জমি, দোকান ও ফ্ল্যাট। অন্তত আটটি ব্যাংক হিসাবে জমা তাঁর কয়েক কোটি টাকা।
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা থেকে কোটিপতি বনে যান যাঁরা : নারায়ণগঞ্জে ছাত্র নয় এমন নেতাও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তাঁদের মধ্যে হাজি শাহ মুহাম্মদ সোহাগ ২০১১ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সোনারগাঁর মোগরাপাড়া এলাকায় পুরান বাজারে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। পরে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের বন্ধু হওয়ার সুবাদে তিনি এখন নানা ব্যবসা ও টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
আহমেদ কাউসার স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি, কিন্তু শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তাঁর উত্থান শুরু। নলুয়ায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দুই তলা ভবন নির্মাণ করেন। গত বছর পাশেই আরো একটি পাঁচতলা ভবন কেনেন। শহীদনগর ও আশপাশ এলাকায় প্রচুর জমির মালিক হোন তিনি।
হাবিবুর রহমান রিয়াদ অয়ন ওসমানের বন্ধু ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রভাবে অয়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কোটি টাকা কামিয়েছেন ঝুট ব্যবসা ও টেন্ডারবাজি করে।
চিনির মিঠায় কোটিপতি সিলেট ছাত্রলীগ সভাপতি, সম্পাদক : সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ পদ পেয়ে বছর ঘুরতেই হন কোটিপতি। এরপর শুধু বেড়েছে অর্থ। ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি, এলপিজি ফিলিং স্টেশনসহ নানা সম্পদ গড়েছেন। তাঁদের হাতে সিলেটে চিনি চোরাচালান সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েই শতকোটি টাকার মালিক সাদ্দাম : এস এম সাদ্দাম হোসেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েই গড়ে তুলেছেন শতকোটি টাকার সম্পদ। পাহাড় কেটে সাবাড়, একের পর এক জমি রেজিস্ট্রি, স্বর্ণ চোরাচালান থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, অপরাধ জগতের কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাঁর হাত থেকে। আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের ‘আপন লোক’ পরিচয়ে সব জায়গায় প্রভাব খাটিয়ে সাদ্দাম হোসেন নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। অনেকের মতে, তিনি এখন কয়েক শ কোটি টাকার মালিক।
সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রীর মদদে কোটিপতি মেহেরপুরের ছাত্রলীগ নেতা বাঁধন : সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মদদপুষ্ট মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মন্ত্রীর মদদে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারি বাগিয়ে নিয়ে তিনি সম্পদের মালিক হন। এ ছাড়া অনলাইন জুয়ার পরিচালনা করেও হয়েছেন টাকার মালিক।
ছাত্রলীগের টিকিটে কোটিপতি বনে যান ভালুকার মামুন : ছাত্রলীগ করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সীমান্তবর্তী রাজৈ ইউনিয়নের সোহাল গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে মনিরুজ্জমান মামুন। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, পদ পেয়েই ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিনেছেন একতলা বাড়ি, সাত-আটটি রুমের টিনশেড বাসা আর মালিক হয়েছেন চার-পাঁচটি ডাম্প ট্রাকের। নিজ এলাকায় কিনেছেন প্রচুর পরিমাণে জমি, ছোট ভাইয়ের নামে করেছেন একাধিক বিশাল মৎস্য খামার।
আখাউড়া ছাত্রলীগের শূণ্য থেকে ‘কোটিপতি’ মুরাদ : অচেনা মুখ মুরাদ হোসেন। ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক হয়ে এলাকায় হৈ-হুল্লোড় ফেলে দেন। দুইবার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হন। পরে চেয়ারম্যান হয়ে আলাদিনের চেরাগ হাতে পান। দ্রুত সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। করেছেন চাকরি বাণিজ্য, ইটভাটা, জমি, স্বর্ণালংকারও কেনা নানা ব্যবসায়। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পিএ আলাউদ্দিন বাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বেশি বেপরোয়া ছিলেন মুরাদ।
ঝিনাইদহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার সম্পদের পাহাড় : দুটি টিনের ঘর আর নামমাত্র জমির মালিক থেকে ছাত্রলীগ নেতা দিনার বিশ্বাস এখন কোটিপতি। ঝিনাইদহের শৈলকুপার সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস ২০১১ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখল, সরকারি প্রকল্প হাতিয়ে, হামলা-মামলা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোসহ হিন্দুদের কাছ থেকে ধারকর্জের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার নেতাদের আয়ের উৎস নেই, আছে বিপুল সম্পদ : চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে সম্পদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরেফিন আলম রঞ্জু ও মোহাইমান হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্ররাজনীতি করার সময় থেকেই আরেফিন আলম রঞ্জু ঠিকাদারি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন। গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ি, গাড়ি ও নানা ব্যবসা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি ছিলেন মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক। তিনিও নগদ টাকা ও নামে-বেনামে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
বরিশালে চাঁদার আয়ের উৎস কোটিপতি : রইচ আহমেদ মান্না ছিলেন ছাত্রলীগকর্মী। পদ পেয়েই শুরু করেন বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি। ছাত্রলীগ থেকে শ্রমিকলীগ, পরে হয়ে যান বাস মালিক। আর এভাবেই বনে যান কোটিপতি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে না হলে দলের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে সংসদ ও সরকার গঠন করবেন। এটাই ছিল বিপ্লবের মূল বিষয়।’ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার দল সরকারকে একটি যৌক্তিক সময়সীমা দেবে। সেই সময় পেরিয়ে গেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের বিএনপি নিশ্চয়ই ঘরে বসে চিনাবাদাম চিববে না। আগামীতে বাস্তবতার নিরীখে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকার কী করে, তা তারা কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর আমরা অতীতে যা করেছি তা করব। মৃত্যু পরোয়ানা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা অবস্থায় আমাদের কাউকেই হত্যা করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে গয়েশ্বর বলেন, ‘কিছু দল এমন কিছু কর্মকাণ্ড করছে যে, তারা ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তারা নিপীড়িত, কিন্তু তারা দেশ স্বাধীন করেনি… আমরা করেছি। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি দেশের শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে। তিনিও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, যা সাহসী পদক্ষেপ।