ছিলেন নওগাঁ-১ আসনের খাদ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি। প্রভাব খাটিয়েই নওগাঁয় ভোগ্যপণ্য থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের বলয় গড়ে তুলেছিলেন সাধন চন্দ্র মুজমদার। স্থানীয়দের কাছে যেটি পরিচিত ‘সাধন সিন্ডিকেট’ নামে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেকেই বলছেন, সাধনের চারবারের এমপির মেয়াদে এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ অভিযোগ তদন্তে মাঠেও নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।জানা যায়, সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর- এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ সংসদীয় আসন। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সবশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। দলীয় পদ আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এলাকায় গড়ে তোলেন শক্ত সিন্ডিকেট, যার মূল লক্ষ্য ছিলো শুধু অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন।
স্থানীয়রা জানান, আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে সাধন চন্দ্র মুজমদারের এমন সম্পদ ছিল না। দু’তিন বিঘা জমি ছিল। টেন্ডার জমি ৮-১০ বিঘার মতো ছিল। তিনি বিভিন্ন পুকুর লুটপাট, চাকরির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাধন চন্দ্রের ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনার দায়িত্বে ছিলো চালের বাজারের সিন্ডিকেট ও পুকুর-জলাশয় নিয়ন্ত্রণ। ছোট মেয়ে তৃনা মজুমদার নিয়ন্ত্রণ করতো সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ ও বদলি। দুই জামাতা নাসিম আহম্মেদ, আবু নাসের এবং ভাতিজা রাজেশ মজুমদারের দায়িত্বে ছিলো টেন্ডার বাণিজ্য। তাদের সহযোগিতায় ‘সাধন সিন্ডিকেট’ হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
নওগাঁর সাপাহার পোরশা নিয়ামতপুর এই ৩ থানায় রয়েছে অন্তত ৬ শতাধিক সরকারি পুকুর। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত মৎস্যজীবীদের হটিয়ে সরকারি এসব পুকুর গত ১৫ বছর ধরে জোর করে দখলে রেখেছে সাধন সিন্ডিকেট।এলাকাবাসী জানান, এলাকায় যতোগুলো খাস পুকুর আছে এগুলো সাবেক খাদ্যমন্ত্রী, তার ভাই ও তার এক নাতি জোর করে দখল করে খান। তারা চাকরি দেয়ার নামে, যেকোনো রাস্তার টাকা ছাড়াও শত শত কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।এদিকে গত দেড় দশকে চালের বাজারের দর ওঠা নামার কারণ ছিলো সাধন-মনোরঞ্জন সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ করেন নওগাঁর অটোমিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাবু।তিনি বলেন, ‘চালের বাজারের দর ওঠা নামার জন্য দায়ী ওই সাধন সিন্ডিকেট। এটা ব্যবসায়ীরা করেনি। তাদের পলেছি, ভুল ও টাকা কামানোর প্রয়োজনে এমনটা করেছেন।’
এরইমধ্যে সাধন সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। সাধন চন্দ্রকে আসামি করে দুটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা বলে জানান নওগাঁ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মো. মিনহাজুল ইসলাম।তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেছেন, হামলা, দখল ও বিভিন্ন মানুষের সম্পত্তি লোপাট করেছেন। এসব ব্যাপারেও মামলার প্রস্তুতি চলছে।’নওগাঁর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং সাবেক সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যায় সাধন চন্দ্র মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যরা।