সরকার পতনের পর জামালপুরে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা বাসস্ট্যান্ড, সিএনজিস্ট্যান্ড, বাজার, বালুমহালসহ বিভিন্ন স্থাপনা একে একে দখলে নিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বালুমহাল ও পরিবহন খাত থেকে ওঠানো চাঁদার টাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে সমঝোতার চেষ্টার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর সদরসহ জেলার সাতটি উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের লোকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালান। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে সদরে। এর মধ্যে বালুমহাল দখলে নিতে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
টানা ১৬ বছর জামালপুর শহরের ছনকান্দা থেকে পিয়ারপুর এলাকা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় অর্ধশত স্থান থেকে দিন-রাত বেপরোয়া বালু তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইজারার নামে রাস্তায় ট্রাকপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে চাঁদা নিতেন। এখন সেই বালুর ব্যবসা নিজেদের কবজায় নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
ছনকান্দা এলাকার বালু ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বালু ব্যবসায় নেই। বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের লোকজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। বালুর ইজারা আদায়ের ঘর ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। শুনেছি, বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছনকান্দা বালুমহালের ইজারাদার মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী বাহার উদ্দিনের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি চলছে।’
গত ১৮ আগস্ট শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকার একটি বালুমহাল দখলে নিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. সুহেলের অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় সুহেলের অনুসারী শরিফপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল করিমের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
রেজাউল করিম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালুর ঘাটগুলো এখন জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। ঘাটে যাওয়ার সময় আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই দিন আমার লোকজনের সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটেনি। বালুমহালের ইজারাদার অসীম এন্টারপ্রাইজের লোকজনের সঙ্গে কিছু একটা হয়েছিল। আমি সেটা জানি না। বালুমহালে আমাদের কেউ যাননি।’