পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কিছু ভিডিও-ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে পাকিস্তানিদের নিজস্ব পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়েও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিল, এমনকি বাংলা গানও গাইতে শোনা গেছে।
সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে বাংলাদেশের মতো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও অনুযায়ী, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ঢেউ পাকিস্তানেও বইতে শুরু করেছে। সে দেশের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রেরণা জোগাচ্ছে বাংলাদেশিদের সাহস ও আত্মত্যাগ। ছাত্র-জনতার মহাক্ষোভের বিস্ফোরণে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার যেভাবে পতন হয়েছে; সেভাবে নিজেদের সরকার পতনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এ পরিস্থিতিতে বিজয় ও সাহসের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন অনেক পাকিস্তানি। অনেকে বাংলাদেশের ছাত্র শহিদের প্রতি সম্মান জানাতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, হাসিনা সরকারের দ্বারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেমন নির্যাতিত হয়েছে তেমনি তাদের সরকারের হাতে পাকিস্তানিরাও নির্যাতিত হচ্ছেন। বর্তমান পাকিস্তানিদের আন্দোলন ক্ষমতাবানদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধেই।চাহিদা বাড়ায় পাকিস্তানের ফুটপাথে বিক্রেতারা বাংলাদেশের পতাকা রাখছেন। সেসবের বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
এদিকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। ওই মিছিলেও বাংলাদেশের পতাকা হাতে অংশ নেন অনেক পাকিস্তানি। সেসঙ্গে পথে-ঘাটে মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ মানুষ।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মিষ্টি বিতরণ করছেন কয়েকজন পাকিস্তানি। একটি গাড়ি থেকে যাত্রী কিসের মিষ্টি জিজ্ঞেস করেন। জবাবে বিতরণকারী বলেন, হাসিনা পালিয়েছে। এতে উভয়ই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং যাত্রী প্যাকেট থেকে মিষ্টি তুলে নেন।
অপর এক ভিডিওতে বাংলা গান গেয়ে বিক্ষোভকারীদের উজ্জীবিত করতে দেখা গেছে। ওই বিক্ষোভেও বাংলাদেশের পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছিল। এ ছাড়া ‘তুমি কে-আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ সেøাগানও শোনা গেছে।বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিজয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে পাকিস্তানে গত সপ্তাহে মূলত বেলুচিস্তানে বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়।
এর আগে আন্দোলনটি বেলুচিস্তান প্রদেশে চীন-সমর্থিত বিমানবন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু ক্রমশ তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। বর্তমানে বেলুচিস্তান স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে আসার খবরেও সেখানে অনুপ্রেরণা ছড়াচ্ছে। গত সোমবার পাকিস্তানের কোয়েটায় গুম হওয়া বেলুচ নেতাদের সন্ধানের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা।
পৃথকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরাও নতুন করে মাঠে নেমেছেন। তারা ইমরান খানের মুক্তি এবং সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে শক্তি দেখানোর পরিকল্পনা করছেন। এ আন্দোলনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ছাত্র সংগঠন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দলটির আন্দোলনের প্রচারেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গণভবনের মতো পরিস্থিতি শিগগিরই পাকিস্তানে হতে যাচ্ছে।
গত শুক্রবার দেশের সংবিধান পুনরুদ্ধার ও ছাত্র সংঘগুলোকে উজ্জীবিত করতে আন্দোলনের ডাক দেয় পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিটিআইর ছাত্র শাখা আইএসএফ। ৩০ আগস্টের মধ্যে ইমরান খানকে মুক্তির আলটিমেটামও দিয়েছে পাকিস্তানের স্টুডেন্ট ফেডারেশন।