বাংলাদেশে গত বহু বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমেও শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার জের ধরে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিট অ্যাক্টের মতো আইন করা হয়েছে।সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়ার জের ধরে মাসের পর মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী যেমন বলছিলেন, ’তারা একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছি। সাইবার সিকিউরিটির ভয় দেখানো, মিথ্যা মামলা দেয়া- মানুষজন একটা ভয়ের মধ্যে ছিল।বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার ও পুলিশ বাহিনী মিলে পুরো দেশকে একটা ‘মাফিয়া স্টেট’ তৈরি করেছিল।আর এসবের জন্য সবসময়েই সরকারি প্রশাসন যন্ত্র, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী এমনকি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে।
যেসব মামলায় গত ১৬ বছরে জামিন হয়নি, সরকার পরিবর্তনের পর এক রাতের মধ্যে সেসব মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এসব রাজনৈতিক দলের শত শত কর্মী। জামিন দেয়ার সময় বিচারক মন্তব্য করেছেন, ‘অনেক কথা আছে যা আমরা বলতে পারি না।’বছরের পর বছর বিরোধীদের ধরে নিয়ে হয় গুম করে দেয়া হয়েছে না হলে আটকে রাখা হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর এরকম কয়েকজন ব্যক্তি মুক্তিও পেয়েছেন, যাদের আট বছরের বেশি সময় ধরে কোন অভিযোগ ছাড়াই গোপনে আটকে রাখা হয়েছিল।ফলে মানুষ যে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে সময় পার করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতেই গণআন্দোলনে সবাই নেমে এসেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
‘মানুষের মধ্যে দিনে দিনে সরকারের প্রতি বা আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ দানা বেধেছে। ফলে তাদের একটা উপলক্ষ্য দরকার ছিল রুখে দাড়ানোর,’ বলছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।বিভিন্ন দেশের ইতিহাসেও দেখা গেছে, জোর করে ক্ষমতায় থাকা দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এক সময় আমলা, প্রশাসন বা পুলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।তাদের মতে, টানা বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে এক সময়ের মাঠের রাজনৈতিক দল হলেও দলটির নেতা-কর্মীরা জনগণের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল দলটি। বিশেষ করে দলটি পুরোপুরি প্রশাসন ও আমলানির্ভর হয়ে উঠেছিল।দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব নেতাদের পদ দেয়া হতো, অভিযোগ রয়েছে যোগ্যতার বদলে বরং স্বজনপ্রীতি বা অর্থের বিনিময়ে এসব পদ দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক পদ বা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন অনেক ব্যক্তিকে সুযোগ দেয়া হয়েছে যাদের অতীতে রাজনীতির সাথে কোন সংস্রব ছিল না। তাদের অনেকেই এসব পদকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে।সাংবাদিকসহ পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে এমনভাবে দলীয় বিস্তার ঘটানো হয়েছে যাতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আসল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। ।রাজনৈতিক ভাষ্যকার মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করতে করতে তাদের দলটাকে দুর্বল করে ফেলেছিলেন। অযোগ্য, অদক্ষ ব্যক্তিদের দলের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে। ফলে তাদের সব কিছু ছিল, কিন্তু দলটাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।’
‘প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামে, আওয়ামী লীগের নামে তাদের নেতাকর্মীরা যা করেছে, তাতে মানুষের ক্ষোভ জমতে জমতে এমন একটা অবস্থায় গেছে, এবার শুধু সেটার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। গুলিতে যখন অনেক মানুষ মারা গেছে, তখন তাদের গুলিতে মৃত্যুর ভয়ও চলে গেছে,’ তিনি বলছেন।শুধু সাধারণ মানুষ নয়, যেসব বাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকার ক্ষমতায় টিকে ছিল, সেইসব বাহিনীর মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। তাদের শীর্ষ পদগুলো থাকা ব্যক্তিরা যেমন এসব ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো বাহিনী পরিচালনা করেছেন, আইন বা নিয়মের ধার ধারেননি। তেমনি দুর্নীতির করে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, ‘তাদের একটা ক্ষমতার দম্ভ তৈরি হয়েছিল। তারা মনে করেছিল, ১৫ বছর চলে গেছে। আরো ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে। জবাবদিহিতার কোন দায় তাদের তৈরি হয়নি। তারা মনে করেছে, যা করেছে, সব ঠিক করেছে।’পরিবারে আওয়ামী লীগের পূর্ব ইতিহাস আছে অথবা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের শীর্ষ বা গুরুত্বপদে বসানো হয়েছে।রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায় থানার ওসি থেকে শুরু করে কমিশনার পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দলীয় সম্পৃক্ততার অভাবে অনেক কর্মকর্তা অবহেলিত থেকেছেন।
বাংলাদেশের গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। রাতারাতি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে সব কিছুর ওপরে। মানুষের সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে।সেই সাথে র্রিজার্ভের ঘাটতি, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার, ব্যাংকিংখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের গণমাধ্যমে।অথচ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের মধ্যে দিনে দিনে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে।আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদের সময় পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, টানেল, পায়রা বন্দর, পায়রা সেতু, রেল সংযোগের মতো বহু ব্যয়বহুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের মতো অনেক স্থানে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও এনেছে। কিন্তু সেই সাথে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে।শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীরা বারবার এসব উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে গেলেও তার খুব বেশি প্রতিফলন নিজেদের সাংসারিক বা ব্যক্তি জীবনে তেমন একটা দেখছিলেন না সাধারণ মানুষ। ফলে তারাও একটি পরিবর্তন চাইছিলেন।অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, ‘অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারা দেখিয়েছিল উন্নয়ন। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই উন্নয়ন ছিল ফাঁপা উন্নয়ন। কারণ তাতে কর্মসংস্থান হয়নি। উন্নয়নের ফল বিতরণও ঠিক মতো হয়নি। অল্পকিছূ মানুষ এর ফল ভোগ করেছে।’সেই সাথে নেতাদের, সরকারি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া, দুর্নীতি-ঘুষ, ছোটখাটো ব্যবসায়ী-হকার থেকে শুরু করে সেবা নিতে যাওয়া প্রতিটি মানুষের ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে।
ব্যাঙ্কিংখাতে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সর্বশ্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেসবের জন্যও অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, কাউকে জবাবদিহি করতে হয়নি। এগুলোর সব কিছুতে মানুষের ক্ষোভ জমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘এসবের বোঝা পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপরে, যাদের দ্রব্যমূলের ব্যয় বেড়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেসব দূর করতে সরকারের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছিল না।’মানুষ তাতেও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তারা এসব কিছুর জন্য দায়ী করেছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে।’সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, এসবের বাইরে ভারতের প্রতি সরকারের অতি নির্ভরতাও অনেকে পছন্দ করেনি বলে তিনি বলছেন।কারণ গত কয়েক বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় সেগুলো ভারতের জন্য বেশি সুবিধাজনক বলে সমালোচনা রয়েছে।‘ভারতের ওপর তাদের নির্ভরতা, যেসব চুক্তি করেছে, দেখা গেছে সেসব ভারতের পক্ষে যাচ্ছে। ঋণ বাড়ছে। নানা কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছি,’ বলছেন চৌধুরী।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া একটি আন্দোলন কেন সরকার গুলি-গ্রেফতারের মতো বলপ্রয়োগের পথে গেল, তা অনেককে অবাক করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ মন্তব্যের জবাবে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে যখন পথে নেমে আসে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগ দেবে।এটা পরিষ্কার ছিলো যে- প্রথম থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনার আগ্রহ বা নমনীয়তা দেখায়নি আওয়ামী লীগ। বরং আগের সব আন্দোলনের মতো শক্ত হাতে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে।প্রথমে নিজেদের ছাত্র বাহিনীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, সেখানে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে।বেপরোয়াভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন, গুলি চালানোয় পাঁচ সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে।তারপরে যখন পরিস্থিতি খানিকটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বলে মনে হয়েছে, তখন শত শত মামলা করে রাতের বেলা ব্লকরেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে ধরে এনে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এমনকি রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার পুলিশের গুলি করার ভিডিও থাকার পরেও পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়েছে, নিরীহ এক শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।ছয়জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল ও বাড়ি থেকে ধরে এনে কোনো কারণ না দেখিয়েই দিনের পর দিন গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিবৃতি আদায় করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে সেজন্য জবাবদিহিও করতে হয়নি।পুলিশ, বিজিবি ও দলীয় বন্দুকধারীদের গুলি করার ছবি ভিডিও থাকার পরেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতারা ক্রমাগত অসত্য বক্তব্য দিয়ে গেছেন, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন, আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছেন।এমনকি ‘পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে’ এমন কথাও বলা হয়েছে সরকারি মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। ইন্টারনেট বন্ধ করা নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে।
এসব কিছুই মানুষের ভেতর ক্ষোভ তৈরি করেছে,তাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘উচ্চপর্যায় থেকে নেতারা যে ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যেও ছিল অন্ধ বিশ্বাস। ফলে তারা আন্দোলনকে গুরুত্ব দেননি। তারা ইতিহাস থেকেও কোন শিক্ষা নেননি।’
‘আগের সব আন্দোলন যেমন তারা দমন করে এসেছে, এবারো সেটাই চেষ্টা করেছে। কিন্তু ছাত্ররা আন্দোলনা অব্যাহত রাখায় জনগণের সমর্থন চলে এসেছে। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বলপ্রয়োগের ফলে জনগণের মধ্যে রোষানল তৈরি হয়েছে। ফলে তারা এর বিরুদ্ধে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছে,’আন্দোলনের নেপথ্যে ‘জামায়াত-শিবির রয়েছে’ দাবি করে বরাবরই আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা বাস্তবতা অস্বীকার করে গেছেন। এমনকি এর জের ধরে তারা তড়িঘড়ি করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করে। এর বাইরে দেশী-বিদেশী মহলের ইন্ধন রয়েছে বলেও নানাসময় অভিযোগ তোলা হয়েছে।বিশ্লেষকরা মনে করেন, একদিকে যেমন সরকার এর মধ্যে প্রতিপক্ষের ইন্ধন খুঁজেছে, তেমনি আন্দোলনেও তাদের প্রতিপক্ষরাও নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে, অংশ নিয়েছে। ফলে আন্দোলন ব্যাপকতা পেয়েছে, সংঘর্ষ-সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে।
পরবর্তীতে সরকার আলোচনার কথা বললেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে এটা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছাড়িয়ে জনমানুষের ক্ষোভের একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
শেখ হাসিনার ছেলে ও তার সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও বিবিসিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোটা আন্দোলন যে সরকার উৎখাতের দিকে গড়াবে, সেটি তারা কেউ ধারণা করতে পারেননি।বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের দাবিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব আমলে নেয়নি, তেমনি পরের দিকে এসব দাবির সাথে সাথে সাধারণ মানুষের দাবি মিশে গেছে, তারাও এর অংশ হয়ে উঠেছে, সেই বাস্তবতাও তারা বুঝতে পারেনি।
পুরো পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের অবিবেচনা, ভুল সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।আওয়ামী লীগ ঘরানার বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের সেসব অযৌক্তিক ও অবিবেচক সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা অভিযোগ করছেন।আওয়ামী ঘরানার লোকজন ও বিভিন্ন সংগঠন মিলে দিনের পর দিন সরকারকে নানা অযৌক্তিক অন্যায় কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে যে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছে, সেই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন পরে সবার জন্য ধ্বংসের কারণ হয়েছে,’ বলছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।