দীর্ঘদিন পর সরগরম হয়ে উঠেছে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গতকাল সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর থেকেই হাজারো নেতা-কর্মী ভিড় করছেন বিএনপির এই কার্যালয়ে। সেখানে বিরতিহীনভাবে নেতা-কর্মীরা আসছেন। কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, কেউবা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় গত ১৬ জুলাই রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ ছাড়া কার্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ফিতাও টাঙিয়ে দিয়েছিল। পরে ১৯ জুলাই ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতা-কর্মী ওই তালা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর ২০ জুলাই বিএনপির লোকজন নিজেরাই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। গ্রেপ্তার এড়াতেই ওই দিনের পর থেকে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাননি। শেখ হাসিনা পদত্যাগের খবর জানাজানির পর গতকাল বিকেলে ওই কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা খুলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করেন।
আজ বেলা দুইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত এক নেতার জানাজা হচ্ছে। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। আল আমিন হোসেন নামের ওই নেতার জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পরও দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও ভেতরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ অনেকেই আসেন। তাঁরা আগত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা মো. কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে এই প্রথম গ্রেপ্তার–আতঙ্ক ছাড়া দলের কার্যালয়ে এসেছি। এই আনন্দ তো ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। দলের কার্যালয়ও আমাদের কাছে এখন নিরাপদ হয়েছে।’
কার্যালয়ের সামনে আগত নেতা-কর্মীদের ‘পালাইছে রে পালাইছে/ শেখ হাসিনা পালাইছে’, ‘হই হই রই রই/ শেখ হাসিনা গেলি কই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও নয়াপল্টন কার্যালয়ের পাশে বা কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় অথবা কার্যালয়ের পূর্ব দিকে ফকিরাপুল মোড়ে সব সময় পুলিশের অবস্থান থাকত। তবে আজ কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। এমনকি এত দিন কার্যালয় এলাকায় দিন–রাত অনেক গোয়েন্দা পুলিশের অবস্থান থাকলেও আজ তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।