দ্রোহের আগুনে পুড়ছে জাতি। সরকারি ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার রাজপথে রক্ত ঝড়েছে। গতকাল হবিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে একজন শহীদ হন। সংঘর্ষে খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আন্দোলন ঠেকাতে ফের ছাত্রলীগের হেমলেট বাহিনী ও যুবলীগের কর্মীদের অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। পুলিশের গুলি, টিয়ার সেল, সাউ- গ্রেনেড ও রাবার বুলেটে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ। একই ঘটনা ঘটেছে সিলেট, খুলনা, হবিগঞ্জ, সিলেট লক্ষিèপুরসহ কয়েকটি জেলায়। আইন শৃংখলা বাহিনীর মারমুখি অবস্থান ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের অস্ত্রের মোহড়ার মধ্যেই মিছিলে স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয ও জেলাশহরগুলো।
রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে উঠেছিল। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে শুরু করে শাহবাগ পর্যন্ত লাখো ছাত্র-জনতার আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ছাত্র আন্দোলন নুতন করে যোগদিয়েছে কওমী মাদরাসা ভিক্তিক শিক্ষার্থীরাও। তারাও বাদ জুম্মা বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল করে শাহবাগের দিকে যায়। পুলিশের গুলিতে আড়াইশোর অধিক ছাত্রজনতা শহীদ হওয়ার পর বৈসম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, গৃহিনী, সামাজিক-সাংস্কৃতির সংগঠন, শিল্পী-সাহিত্যিক, নায়ক-নায়িকা-অভিনেতা-অভিনেত্রী, মানবাধিকারকর্মী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, নারী নেত্রী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এমনকি রিক্সাচালক-ভ্যান চালকরাও আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও নিজেদের মতো করে আন্দোলন করছেন, রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। দিনভর পদযাত্রা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। রাজধানী ঢাকার শহীদ মিনার, বাংলা মটর, জাতীয় প্রেসক্লাব, আবতাব নগর, হাইকোট এলাকা, শাহবাগ, উত্তরা, সায়েন্সল্যাবে মিরপুর রোড, বাংলা মটর, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, মীরপুর-১০ এলাকাসহ বিক্ষোভ হয়।
উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঢাকার বাইরে সিলেটে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে পুলিশ শটগানের গুলি-কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে, চট্টগ্রামে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার সব শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, হবিগঞ্জের পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয়, বগুড়ায় প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে, সিলেটে গণমিছিলে পুলিশ শটগানের গুলি ও সাউ- গ্রেনেড ছুঁড়লে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন, নোয়াখালিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী গণমিছিলে নামে, ময়মনসিংহে দ্রোহযাত্রায় কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ রাস্তায় নামে, রাজশাহীতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে মিছিল করেছে। লক্ষিèপুরে শিক্ষার্থীদের মিছিলে অস্ত্রহাতে যুগলীগ গুলি করে।
এ ছাড়াও ভোলা, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ, ফেনি, জামালপুর, রাজবাড়ি, পাবনা, ফেনি, রংপুর, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল প্রকম্পিত হয়ে উঠে শহরগুলে। এ সব মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আগামী রোববার এর মধ্যে গণগ্রেপ্তার বন্ধ, জুলাই হত্যাকা-ের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যার দায়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। দাবি মানা না হলে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্রোহযাত্রা নিয়ে আসে শিক্ষার্থী, জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এ সময় শহীদ মিনার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানেই ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে, সব গ্রেপ্তারদের মুক্তি দিতে হবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার দায়ে পদত্যাগ করতে হবে। এই দাবিগুলো যদি রোববারের মধ্যে পূরণ না করা হয় তাহলে সেদিন বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গণমিছিল শুরু হবে।
এর আগে গণগ্রেপ্তার বন্ধ, জুলাই হত্যাকা-ের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যার দায়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত দ্রোহযাত্রা জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এসে পৌঁছায়। শিক্ষার্থী, সাধারণ জনতার পাশাপাশি সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে শহীদ মিনার জনসমুদ্রে পরিণত হয়।