বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক সোনালী সময়ের সাক্ষী সাকিব আল হাসান। যদিও বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল এখনো কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি, মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব সাফল্য এসেছে, তার অনেকগুলোতেই ছিল সাকিবের বড় অবদান। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স দিয়ে বছরের পর বছর বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডারের স্থানটি তিনি দখল করে রেখেছিলেন। পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। আয় করেছেন বিপুল অর্থ। স্রেফ এটুকুই কি একজন ক্রীড়াবিদের জন্য যথেষ্ট? সম্ভবত না। ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে থাকা সাকিবকে কোনো শিরোপা ছাড়াই হয়তো বিদায় নিতে হবে। শিরোপার বদলে তার সঙ্গী হয়ে থাকবে হরেক রকমের বিতর্ক।
অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে ৩৬ বছর পর আইরিশদের স্বর্ণ জেতালেন উইফেনঅলিম্পিক রেকর্ড গড়ে ৩৬ বছর পর আইরিশদের স্বর্ণ জেতালেন উইফেন
সাকিব আর বিতর্ক তো অনেকদিন ধরেই সমার্থক হয়ে গেছে। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে সাকিব সবসময় বিতর্কে থাকেন। এই মুহূর্তে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলতে যাওয়া সাকিব এক প্রবাসী দর্শকের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ান। সেই দর্শককে তিনি এক পর্যায়ে প্রশ্ন করে বসেন, ‘আপনি দেশের জন্য কী করেছেন’? বারবার তিনি এই প্রশ্ন করতে থাকেন। সেই দর্শক তাকে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে বলেন। জবাবে আরও রেগে গিয়ে সাকিব বারবার এই প্রশ্ন করতে থাকেন এবং কর্তব্যরত পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন বলেও দাবি সেই ভক্তের। আশেপাশের দর্শকরাও তখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাকিবের ওপর।
ব্যাটে খানিক রানের দেখা পেলেন সাকিবব্যাটে খানিক রানের দেখা পেলেন সাকিব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। উঠে আসছে সাকিবের ক্যারিয়ারের অসংখ্য বিতর্কিত অধ্যায়, যার মাঝে দেশের খেলা ফেলে বারবার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে যাওয়ার ঘটনাও আছে। বিসিবি মিডিয়ার সামনে এ বিষয়ে অনেক হম্বিতম্বি করলেও সাকিবের সামনে তারা নতজানু। সাকিব যা ইচ্ছা সেটাই করে যান। যে কারণে পরপর দুটি বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতার পরও সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না। দুটি আসরেই দলের ব্যর্থতায় তার বড় দায় আছে। কিন্তু তাকে বাদ দেওয়ার সাহস হয়তো কারও নেই। বরং বিসিবি সভাপতি বারবার বলে যান, সিনিয়রেরা যতদিন চান ততদিন খেলবেন।
বল হাতে দুর্দান্ত রিংকু-সূর্য, সুপার ওভারে লঙ্কাবধ ভারতেরবল হাতে দুর্দান্ত রিংকু-সূর্য, সুপার ওভারে লঙ্কাবধ ভারতের
দেশের জন্য কী করেছেন- প্রশ্ন করা সাকিব নিজেই জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়ে দেশের ক্রিকেটে তিনি কালিমা লেপে দিয়েছিলেন। তারপরও জুয়ার সঙ্গে তার সখ্যতা শেষ হয়নি। আইনত নিষিদ্ধ হলেও জুয়া কম্পানির বিজ্ঞাপনও করেছেন এরপর। দোকান, শো রুম উদ্বোধনকে তিনি যেন পেশা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টাকার জন্য দুবাইয়ে পুলিশ খুনের আসামির শো রুম উদ্বোধন করতেও তার বাঁধেনি। টাকা-পয়সার ব্যাপারেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নয়। ২০২২ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে সাকিব ও তার কম্পানির নাম। শেয়ার কারসাজি করতে সাকিব তার বাবার নাম বদলে ফেলেছিলেন বলেও প্রমাণিত হয়।
বল হাতে দুর্দান্ত রিংকু-সূর্য, সুপার ওভারে লঙ্কাবধ ভারতেরবল হাতে দুর্দান্ত রিংকু-সূর্য, সুপার ওভারে লঙ্কাবধ ভারতের
ক্রিকেটার সাকিব মাঠের বাইরে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবু শো রুম উদ্বোধন বা ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য তার পারফর্মেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বারবার। তামিম ইকবালের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে তিনি দলের মাঝে টেনে এনেছিলেন। যার প্রভাব পড়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে দলের বিব্রতকর পারফর্মেন্সে। সেই থেকে সাকিবের পারফর্মেন্সের গ্রাফও নিচে নেমে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝে বীরেন্দ্র শেবাগ তাকে অবসর নিতে বলেছিলেন। এমনকী দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় অংশ সাকিবকে আর জাতীয় দলে দেখতে চায় না। কিন্তু সাকিব খেলে যাচ্ছেন। অবসর নিয়ে তার তেমন কোনো ভাবনা প্রকাশ্যে আসেনি। বিসিবিও তাদের সেই আগের অবস্থানেই আছে।
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে নিগারের উন্নতি, বোলারদের দুর্দিনআইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে নিগারের উন্নতি, বোলারদের দুর্দিন
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে আছে কোটা আন্দোলনে। ঘটেছে অনেক প্রাণহানি। সিনিয়র-জুনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকে মুখ খুললেও সাকিব আর মাশরাফি এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ। দুজনেই সরকারদলীয় সাংসদ, সে কারণেই হয়তো তারা চুপ আছেন। কিন্তু যে লক্ষ লক্ষ তরুণেরা তাদের জন্য গলা ফাটান, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, পুলিশের তাড়া খেয়ে টিকিট কেটে যে সমর্থকেরা তাদেরকে সুপারস্টার বানিয়েছেন, সেই তরুণদের প্রতিও তো তাদের কিছু দায়িত্ব আছে। রাজপথে এই তরুণরা যখন রক্ত দিচ্ছেন, সাকিব তার সেই দায়িত্ব পালন করেননি। বরং এক তরুণকে প্রশ্ন করেছেন- ‘আপনি দেশের জন্য কী করেছেন?’ একই প্রশ্ন করা যায় সাকিবকেও। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আপনি দেশের জন্য কী করেছেন? শিরোপা এনে দিয়েছেন? না কোনো আদর্শ স্থাপন করেছেন?