জুবায়েরের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্ব কাউরাট গ্রামে। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম।
শনিবার (২০ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে জুবায়ের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই দিনই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জুবায়েরের মরদেহ বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত জুবায়েরের বৃদ্ধ বাবা নিজেই ছেলের জানাজা পড়ান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে মোবাইল পার্টসের ব্যবসা করতেন জুবায়ের। প্রতিদিন বাড়ি থেকেই দোকানে যাতায়াত করতেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা শুরু হলে মা নূরজাহান বেগম ছেলেকে দোকান খুলতে নিষেধ করেন। মায়ের কথা মেনে ১৮ ও ১৯ জুলাই দোকান বন্ধও রাখেন জুবায়ের। কিন্তু ২০ জুলাই দোকানে যাওয়ার পথেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
জুবায়েরের ছোট ভাই কাউসার জানান, ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার ঘন্টাখানেক পর আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভাইয়ার বুকের বাম পাশে গুলির ছিদ্র ছিল। ভাইয়া ছিলেন আমাদের পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস এবং দুই ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এখন আমাদের কী হবে?
এবছরের ২৩ জুন জুবায়ের বিয়ে করেন রামগোপালপুর ইউনিয়নের মার্জিনা বেগমকে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে আছেন মার্জিনা। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে বাবা নিজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
সোমবার জুবায়েরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। ছেলের কক্ষে বসে কান্নাকাটি করছেন জুবায়েরের বাবা, আর শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন মা। কারও সাথে কথা বলছেন না। ছেলের কথা উঠতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি।
জুবায়েরের মা নূরজাহান বেগম বলেন, ঘটনার দিন আমি মাছ ও ভাত রান্না করে খাবার টেবিলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ি। জুবায়ের খাওয়া শেষে বলে, ‘মা, তোমার কথায় দেশের গণ্ডগোলের জন্য দুই দিন ধরে দোকানটা বন্ধ রাখছি। আজ একটু দোকানটা দেখে আসি।’ এই বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল, ফিরে এলো লাশ হয়ে।