প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ দিতে চাচ্ছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ভোট থেকে সরে এসে ক্ষমা চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে তার সরে আসার খবর জানাতে হবে। ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলার সদর উপজেলায় একজন বহিষ্কৃত নেতা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন, আজ তার সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইতোমধ্যে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শনিবার আরও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়। এসব নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থী হিসাবে ভোটে রয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট হবে আগামী ৮ মে। বিএনপি নেতারা জানান, বাকি ধাপের নির্বাচনে দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছেন। তারা আশা করছেন, কোনো নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন না। নেতারা আরও জানান, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তার পরও দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জনের ডাক দিলে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বহিষ্কৃত মেহেরপুরে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোমানা আহমেদ (মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী) ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করেছেন।
এ ছাড়াও কয়েকজন ক্ষমা চেয়ে আবেদন করবেন বলে জেলার শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে দপ্তরকে জানানো হয়েছে। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ যুগান্তরকে জানান, রোমানা আহমেদ ভোটে অংশ নেবেন না। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে তিনি চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। রোববার (আজ) সদরে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
এদিকে দলের বহিষ্কারাদেশ উপেক্ষা করে প্রথম ধাপের নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। বহিষ্কারাদেশ নিয়েই নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সরোয়ার হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দল বহিষ্কার করছে, এটা নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। নির্বাচনে আছি, থাকব। জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখানে দলীয় কোনো মার্কা নেই। যার জন্য ভোট নিরপেক্ষ হবে আমি আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত জনগণ আমাকে চায়, এজন্য ভোটে আছি। দ্বিতীয়ত, মনোনয়নপত্র কিনলাম, জমা দিলাম। তারপর দল বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি বর্জনের সিদ্ধান্তটা আগে আসত, তাহলেও চিন্তাভাবনা করা যেত। আমরা অলরেডি মাঠে নেমে গেছি, ভোটে শেষ পর্যন্ত থাকবই।’ আরেক বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান তালুকদার খসরু জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তিনি চশমা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
খসরু বলেন, ‘এখন সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২২ এপ্রিল। সেদিন পর্যন্ত উপজেলা, জেলা কিংবা কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে কোনো বাধা পাইনি। যে কারণে ইতোমধ্যেই ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছি।’ এছাড়াও দলটির বহিষ্কৃত আরও চারজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা দলের বহিষ্কারাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত এবং শেষপর্যন্ত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে চান তারা।
শনিবারও উপজেলার ভোটে অংশ নেওয়ায় আরও তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন-ময়মনসিংহ উত্তর জেলা হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল হামিদ (চেয়ারম্যান প্রার্থী), রাঙামাটি জেলা কাউখালী উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মংসুইউ চৌধুরী (চেয়ারম্যান প্রার্থী) এবং শেরপুর জেলা শ্রীবর্দী উপজেলার ২নং পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা (ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী)। এছাড়াও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনেও যারা অংশ নিয়েছেন, তাদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব কারণে এবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেই থাকার কথা বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।