দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীন এবং তার পুত্র ফয়সাল আবেদীনের বিচার শুরু হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো: বদরুল আলম ভুঞার চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে রোববার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামি ৩০ মে।
গতকাল সোমবার দুদকের আইনজীবী রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন। অভিযোগ গঠন কালে বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারপক্ষে তার আইনজীবী মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। ফয়সাল আবেদীন পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অবসরে যাওয়া বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মামলা করে দুদক। মামলাটির তদন্ত করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলা । দাখিলকৃত চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীনের সম্পদ এক কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ টাকা। তার ১৯৮২-৮৩ কর বর্ষ থেকে ২০১০-১১ কর বর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদ ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ টাকা। এর বিপরীতে আয়ের উৎস পাওয়া যায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৪ টাকার। তার আয়ের তুলনায় ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকা বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিচারপতি জয়নুল আবেদীন তার ছেলেকে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন বলে ঘোষণা দেন। যা তার পুত্র ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিচারপতির আয়কর রিটার্নে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দান এবং ফেরত প্রাপ্তির কোনো তথ্য নেই। বিচারপতির দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে দাখিল করা ব্যাংক স্টেটমেন্টে (২০০৫-২০০৬ এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর ) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য নেই। ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে তার দায় ক্রমান্বয়ে পরিশোধ দেখানো হলেও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কাছে টাকা পরিশোধের কোনো দালিলিক প্রমাণ মেলেনি। যা থেকে দুদক প্রমাণ পেয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীন তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করার জন্য ২৬ লাখ টাকা তার পুত্র ফয়সাল আবেদীনের ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন।
এছাড়া, জয়নুল আবেদীন তার স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার হিসাব দাখিল করেন। দুদকের তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রাখা এবং ছেলে ফয়সাল আবেদীনকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য দেয়া ২৬ লাখ টাকা নিজ আয়কর নথিতে ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন না করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। মো: ফয়সাল আবেদীন বাবার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ২৬ লাখ টাকা জেনেশুনে বৈধ করার জন্য সম্পত্তি ক্রয় ও দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রসঙ্গত: বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপি সরকার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত শেষে তিনি ১৬২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে একটি শক্তিশালী বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো গোয়েন্দা সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয় নি। তার দেয়া প্রতিবেদন আওয়ামীলীগ প্রত্যাখ্যান করে। ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ‘জজ মিয়া নাটক’ সামনে আসে।