পাকিস্তানি শোষণ জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় অর্জিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ তার সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা।
আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিপন মাহমুদ।
এর আগে বেলা ১১টায় এবি পার্টির নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক ও সরকারি সদস্যসচিব আলতাফ হোসেইনের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পুষ্পবেদিতে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমার আপন বড় ভাই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আজ এই ৫৩ বছর পরও আমার ভাইয়ের রক্ত শুকায়নি। ১৬ ডিসেম্বর যেদিন পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো সেদিনও ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে উপস্থিত রাখা হয়নি। সেদিন তাকে সিলেটে পাঠিয়ে তার হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়। সেদিনই আমরা বুঝতে পেরেছি আমরা নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে চাই, যত ষড়যন্ত্রই করুন না কেন এটা সিকিম নয় ভুটান নয়, এটা বাংলাদেশ। কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবেনা। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে, সেই যুদ্ধে প্রথম আমরা রক্ত দেব, বাংলাদেশকে আবার মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ৬২, ৬৯ ও ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে স্লোগান ও দাবি তুলেছিল, দুঃখজনকভাবে এখন আমাদেরকে আওয়ামী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একই দাবি তুলতে হচ্ছে। পাকিস্তানি জান্তারা যেভাবে গুলি করে নিরীহ মানুষ মেরে তাদের মসনদ রক্ষা করতে চেয়েছিল, বর্তমান আওয়ামী শাসক গোষ্ঠীও একই কায়দায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে নির্দয়ভাবে গুলি করে মানুষ মারছে। সুতরাং আবারও জনগণকে ৭১ এর মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আওয়ামী হানাদারদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে বলে তিনি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের বহু মানুষ আজ কষ্টে আছে। নানা সমস্যা নিয়ে দুঃখে জীবন যাপন করছে। একেক মানুষের সমস্যা একেক রকম। আমাদের অনেক তরুণ তরুণী ভাই কষ্টে নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা তরুণ ভাই বোনদের বলতে চাই, কষ্টে জীবন নষ্ট করলে চলবে না। কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের জীবন সংগ্রামের নতুন লড়াই শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা আজও প্রতিষ্ঠা হয়নি। শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মানুষের মুক্তির জন্য কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসে সব রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দিয়েছিলেন সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তেমনি আজও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত করে আওয়ামী লীগ জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ফলে এখনও বাংলার মানুষ প্রকৃত অর্থে পরাধীন ও শোষণ বৈষম্যের শিকার।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গত ৫৩ বছর আগে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রক্ত দিয়েছিলেন তা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৪ কোটি মানুষ ঋণ করে খাবার কিনছে। অথচ বাংলাদেশের সরকারের লোকজন আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইউরোপ আমেরিকার বসতি গড়ে তুলেছে। লেখা পড়া করে বেকারত্বের যে সনদ আজ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা আজ তরুণদের নিঃস্ব করে ফেলছে। আমরা দেখেছি ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন দেশের মানুষ ডাস্টবিনে কুকুর বিড়ালদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করেছে অথচ আওয়ামী লীগের নেতাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে শাদি হয়েছে ঢাকা ক্লাবে বিলাসবহুল ভাবে। আজও তারা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে। বাকশালের উন্নয়ন মানে আমরা বুঝতে পারছি, বাকশালের উন্নয়ন মানে দুর্ভিক্ষ, নারী নির্যাতন, আর আমার আপনার টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফূর্তির জীবন। স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে, গণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে বাকশাল মুক্ত করতে হবে।