তীব্র খরা। গাধার পিঠে গ্যালনের বোঝা। ঘন্টার পর ঘন্টা পাড়ি দিতে হয় দুর্গম পথ। শুষ্ক-উত্তপ্ত মাটিতে হাঁটতে হয় বহুদূর। একটু পানির জন্যে এ সংগ্রাম প্রতিদিনের। এমনকি কখনও কখনও দিন চলে যায় পানির খোঁজে। ভয়াবহ খরায় প্রতিনিয়ত এমন দৃশ্যের দেখা মেলে তিউনেসিয়ায়। বিগত চার বছর ধরে চলমান খরার তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলছে। স¤‹্রতি উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। তিউনিসিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস অনুসারে, দেশটির ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। সেচ এবং সুপেয় পানির জন্যে ব্যবহƒত বাধঁগুলোতেও প্রয়োজনীয় পানি নেই। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, বাধঁগুলোতে মাত্র ২২ শতাংশ পানি মজুত রয়েছে। তাছাড়াও দেশটির দক্ষিণে প্রায় ২০ শতাংশ বাঁধ পরিষেবার বাইরে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর উল্টো প্রভাব দেখা যাচ্ছে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে। টুভালুর নয়টি প্রবাল দ্বীপের মধ্যে দুটি ইতিমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন আগামী ৮০ বছরের মধ্যে সমগ্র দ্বীপপুঞ্জ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।
তিউনেসিয়ার রাজধানী তিউনিস থেকে ১৮০ কিলোমিটার (১১০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ওউনিসা মাজহাউদ (৫৭)। খরা কবলিত তিউনেসিয়ায় তার প্রতিদিনের লক্ষ্য পানি খোঁজা। তিনি বলেন, “আমরা জীবিত থেকেও মৃত। একসময় তিউনিসিয়া অন্যতম উর্বর ভূমি ছিল। গমের ক্ষেত এবং আলেপ্পো পাইনের জন্য পরিচিত ছিলো। এখন আমাদের কোন রাস্তা নেই, জল নেই, কোন সাহায্য নেই। আসলে আমাদের কিছুই নেই।” পানি সংগ্রহের জটিলতায় অনেকে শারীরিক সমস্যারও সম্মুখীন হচ্ছেন। মাজহাউদ আরও বলেন, পরিবারের জন্য পানি সরবরাহ করার অর্থ হল ‘আমাদের পিঠ, মাথা এবং হাঁটুতে ব্যথা হওয়া কারণ আমরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করি।’ তবে তিউনেশিয়ায় এ পানি সংকটে চিন্তিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট অনুসারে, তিউনিসিয়া ইতিমধ্যে ৩৩ তম পানি সংকটপূর্ণ দেশ। সেখানকার প্রতিজন বাসিন্দার জন্য বরাদ্দ পানির পরিমাণ ৪৫০ কিউবিক মিটারে নেমে এসেছে। পানির অভাবে কৃষিকাজ এবং পশুস¤‹দকেও মারাÍকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। মাজহাউদসহ আরও ২১ টি পরিবার মাত্র একটি পানির উৎস ব্যবহার করে। তাদের মতে, প্রতিটি পরিবার মোট প্রায় ১০ লিটার (২.৬ গ্যালন) পানি পেয়ে থাকে। তবে তা পান করার অযোগ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের এমন বিপর্যয়কর প্রভাবের সাক্ষী হয়েছে ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোও। দুবাইতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ২৮’ এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্যারিবিয়ান এবং ৩৯টি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র গ্লোবাল ওয়ামিং নিয়ে গুরত্বপূর্ণ বৈঠক করছেন। এ বিষয়ে ‘দ্যা এলিয়েন্স অফ স্মল আইল্যান্ড স্টেটস’ (এওএসআইএস) চেয়ারম্যান সেড্রিক শুস্টার বলেন, “আমাদের ছোট দ্বীপের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমার নিচে রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”